সারাবিশ্বে ১১৯তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই প্রথম। এমআরপি থেকে ই পাসপোর্টের সুবিধা একটু বেশি, যে কারণে বর্তমান সময়ে প্রায় সকলেই ই-পাসপোর্ট এর দিকেই ঝুঁকছে।
বাংলাদেশে পাসপোর্ট সেবা প্রথম চালু হয় ১৯৭৩ সালে। মেশিন রিডেবল এম আর পি (MRP) নামে যা অধিক পরিচিত। ২০২০ সালে ই-পাসপোর্ট (E-Passport) সেবা চালু করার মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে গেলো।
তথ্য প্রযুক্তির যুগে উন্নত বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ এখন ই-পাসপোর্ট বা ডিজিটাল পাসপোর্ট ব্যবহার করছে। যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে ই-পাসপোর্টে তা নিয়েই আজকের আলোচনা।
আপনি যদি ই পাসপোর্ট এর সুবিধা ও অসুবিধার কথা জানতে চান তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। আজ আমি আপনাদের সামনে ই পাসপোর্টের বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধার কথা তুলে ধরবো।
ই পাসপোর্ট বলতে কী বুঝায়?
ই-পাসপোর্ট (E-Passport) মূলত একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে একটি এমবেডেড ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ রয়েছে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্টকার্ডে যেমনটা দেখতে পাওয়া যায়, ই-পাসপোর্ট এর মধ্যেও ঠিক তেমনি একটি মাইক্রোপ্রসেসর চিপ যুক্ত করা হয়েছে।
সেই মাইক্রোপ্রসেসর চিপে পাসপোর্টধারীর সমস্ত তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। যেমন- পাসপোর্টধারীর তিন ধরণের ছবি, দুই হাতের দশ আঙুলের ছাপ ও দু’চোখের আইরিশ ইত্যাদি।
ই-পাসপোর্ট এর অপর নাম ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট বা ডিজিটাল পাসপোর্ট।
ই পাসপোর্টের সুবিধা সমূহ
ই-পাসপোর্ট সম্পূর্ণ আধুনিক একটি ডকুমেন্ট। এটি প্রযুক্তিগত কৌশলে ইস্যু করা হয়েছে। তাই এতে বিভিন্ন ধরণের ডিজিটাল ফিচার ব্যবহার করা হয়েছে, যা পাসপোর্টধারীর জন্য বিভিন্ন সুবিধা তৈরি করবে।
তাছাড়া, বিভিন্ন পত্রিকা ও নিউজ পোর্টালে ই-পাসপোর্টের ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। চলুন জেনে নিই ই পাসপোর্ট এর সুবিধা গুলো সম্পর্কে।
▷ ই পাসপোর্ট করার জন্যে কোনো ডকুমেন্টকে সত্যায়িত করতে হয় না। পাসপোর্ট সাইজের ছবিরও প্রয়োজন নেই।
▷ ই পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ দালাল মুক্ত। প্রতারণার সুযোগ নেই।
▷ ঘরে বসেই আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করতে পারবেন।
▷ ই পাসপোর্টের আবেদন ফি ব্যাংক, ক্রেডিট কার্ড বা মাস্টার কার্ড এর মাধ্যমে পে করা যাবে।
▷ যে কোনো সময় অনলাইনের মাধ্যমে ই পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা বা স্ট্যাটাস চেক করা যায়।
▷ অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুদের জন্যও ই পাসপোর্ট করার ব্যবস্থা রয়েছে।
▷ ১০ বছরের মেয়াদে ই পাসপোর্ট করা যায়। এতে প্রবাসীদের জন্য অনেক সুবিধা হবে।
▷ ই পাসপোর্টধারীরা ই-গেটের মাধ্যমে নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে দেশের বাইরে যেতে পারবেন। ফলে বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হবে না।
▷ কারো পাসপোর্টে যদি কোনো সমস্যা থাকে, ই-গেটের মেশিনে লাল বাতি জ্বলবে এবং দায়িত্বরত কর্মীগণের কাছে সিগন্যাল পৌঁছে যাবে।
▷ কারো বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলে ই-পাসপোর্ট দিয়ে তা সহজেই ধরা যাবে।
▷ ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকায় কেউ এটিকে নকল বা জাল করতে পারবে না।
▷ ই-পাসপোর্টে রয়েছে ইলেকট্রনিক চিপ। এই চিপে পাসপোর্টধারীর তিন ধরণের ছবি, ফিংগার প্রিন্ট ও চোখের আইরিশ সংরক্ষিত থাকে। ফলে যে কোনো দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভ্রমণকারীর সকল তথ্য সহজেই জানতে পারবেন।
▷ ই পাসপোর্ট দিয়ে খুব সহজেই ভিসা চেক করা যায়।
এগুলো ছাড়াও ই পাসপোর্টের অনেক সুযোগ – সুবিধা রয়েছে, যা এম আর পি (MRP) পাসপোর্টে পাওয়া যায় না।
ই পাসপোর্টের অসুবিধা আছে কি?
কৌতুহল বশতঃ অনেকেই জানতে চান ই পাসপোর্টের অসুবিধা গুলো কি? সাধারণ ভাবে আমরা সকলেই জানি, সব কিছু্রই সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে।
তবে সত্যি কথা বলতে, ই-পাসপোর্টের কোনো অসুবিধা আমি লক্ষ্য করিনি। এটি সত্যিই ভ্রমণকারীদের জন্য সহজলভ্যতা এনে দিয়েছে।
বিভিন্ন দেশে এম আর পি পাসপোর্ট নিয়ে বিভিন্ন ধরণের জালিয়াতি হওয়ার নজির রয়েছে। এটা সত্যিই খুব ভয়ঙ্কর বিষয়। কিন্তু ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে জালিয়াতি করা অসম্ভব।
সুতরাং, ই পাসপোর্টের অসুবিধা কেবল তাদের জন্যই, যারা ইন-লিগ্যাল কাজের সাথে জরিত।
FAQ
(ক) বিশ্বের কোন দেশ প্রথম ই পাসপোর্ট চালু করে?
উত্তরঃ মালয়েশিয়া। সারা বিশ্বে মালয়েশিয়াই প্রথম (১৯৯৮ সালে) ই পাসপোর্ট ব্যবস্থা চালু করেছিল।
(খ) বাংলাদেশে ই পাসপোর্ট কবে চালু হয়?
উত্তরঃ ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারী রোজ বুধবার।
(গ) ই পাসপোর্ট এ বাংলাদেশ কততম?
উত্তরঃ ই-পাসপোর্ট সেবায় বাংলাদেশ ১১৯তম দেশ।
(ঘ) ই পাসপোর্ট দিয়ে টিকা নিবন্ধন করা যায়?
উত্তরঃ হ্যাঁ, করা যায়।
(ঙ) অনলাইনে ই পাসপোর্ট চেকিং করা যায়?
উত্তরঃ হ্যাঁ, ই পাসপোর্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করা যায়।
শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠক, ই পাসপোর্টের সুবিধা ও অসুবিধা গুলো আপনাদের সামনে উপস্থাপন করেছি। আপনি যদি ই-পাসপোর্টধারী হয়ে থাকেন অথবা হতে চান, তবে আশাকরি আর্টিকেলটি আপনার কাজে আসবে।
ই পাসপোর্ট সেবা সারা বাংলাদেশের ৬৪ জেলাতেই চালু হয়েছে। এই সেবাটি গ্রহণ করার জন্যে অবশ্যই ই পাসপোর্ট ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন অথবা নিকটস্ত পাসপোর্ট অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করুন।
ই-পাসপোর্ট সম্পর্কিত আপনার যদি আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে অবশ্যই কমেন্টে জানিয়ে দিন। যথাসাথ্য আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ।