ফ্রান্সকে স্বাধীনতা, সমতা ও ভ্রাতৃত্বের দেশ বলা হয়। ফ্রান্সে আছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপত্য, মনোরম পরিবেশ, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং অগ্রণী অর্থনীতি। আর এ কারণেই অনেকেই স্বপ্ন দেখে ফ্রান্সে স্থায়ীভাবে বসবাস করার। কিন্তু ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় কি আপনার জানা আছে?
কিভাবে পাবেন ফ্রান্সের নাগরিকত্ব? এই ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করবো ফ্রান্সের নাগরিকত্ব অর্জনের বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে। আপনি যদি ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন, তবে এই ব্লগটি আপনার জন্যই।
ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায়
ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পাওয়ার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। তারমধ্যে ৪ টি উপায় আপনাদের সাথে শেয়ার করা হলো। ১. প্রবাসী বা অভিবাসী হিসেবে বসবাসের মাধ্যমে (Naturalization), ২. জন্মের মাধ্যমে (Birthright), ৩. বিয়ের মাধ্যমে (Marriage), ৪. পূর্বপুরুষের মাধ্যমে (Descent) ইত্যাদি।
১. বসবাসের মাধ্যমে (Naturalization):
আপনি যদি ফ্রান্সে ৫ বছর সময় ধরে প্রবাসী হিসেবে বসবাস করেন, তবে আপনি ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
প্রবাসী বলতে আপনি ফ্রান্সে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যান, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে যান অথবা পড়াশোনার জন্য যাননা কেন, আপনি যদি ৫ বছর ফ্রান্সে বসবাস করতে পারেন, তবেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ফ্রান্সে নিয়মিত করদাতা হিসেবে ৫ বছর থাকলেও নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়। আবার স্বাধীনভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারলেও আবেদন করার অপশন আছে।
শরণার্থী, সামরিক কর্মী, বিশেষ দক্ষ ব্যক্তিদের জন্য আলাদা আলাদা নাগরিক নীতিমালা রয়েছে।
২. জন্মের মাধ্যমে (Birthright):
আপনার পিতা বা মাতা যদি ফরাসি নাগরিক হন, তাহলে আপনি জন্মগতভাবেই ফরাসি নাগরিক হবেন। ফ্রান্সে জন্মের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার আরও একটি উপায় আছে।
যদি আপনি ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেন এবং আপনার পিতামাতা যদিও অন্য দেশের নাগরিক হন, তাহলে কিছু শর্ত পূরণ করার মাধ্যমে আপনি ফরাসি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
৩. বিয়ে (Marriage):
আপনি যদি একজন ফরাসি নাগরিকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তবে ২ বছর পর আপনি ফরাসি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
বিবাহের মাধ্যমে ফরাসি নাগরিকত্বের জন্য কিছু শর্তাবলী রয়েছে। যেমন – বিবাহ স্থায়ী হতে হবে এবং ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আপনার জ্ঞান থাকতে হবে।
৪. পূর্বপুরুষের মাধ্যমে (Descent):
আপনার পূর্বপুরুষ (দাদা/দাদী, বাবা/মা) যদি ফরাসি নাগরিক হন, তাহলে কিছু শর্ত পূরণ করার মাধ্যমে আপনি ফরাসি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ধরুন, আপনার দাদা ছিল একজন ফরাসি নাগরিক। কোনো এক কারণে আপনার বাবাকে শৈশবেই বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং বাংলাদেশেই পড়াশোনা করান। পড়াশোনা শেষে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে এখানেই সেটেল হয়ে যায়। আর তিনি ফ্রান্সে ফিরেননি।
আপনিও যদি এমন পিতার সন্তান হন এবং এক পর্যায়ে এসে ফ্রান্সেই চলে যেতে চান, তবে আপনার জন্যও ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় রয়েছে। এজন্য আপনার কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে। যেমন –
- জন্ম সনদ
- ভোটার আইডি কার্ড
- আয়ের প্রমাণ (যেমন: কর আদায়ের রসিদ / ব্যবসায়ের লাইসেন্স)
- ফরাসি ভাষার দক্ষতার প্রমাণ (যেমন: TCF, DELF সার্টিফিকেট)
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
- পূর্বপুরুষের নাগরিকত্বের প্রয়োজনীয় নথিপত্র ইত্যাদি।
আবেদন প্রক্রিয়া:
- প্রথম ধাপ: আপনার নিকটতম ফরাসি দূতাবাস বা কনস্যুলেটে যোগাযোগ করে আবেদনপত্র সংগ্রহ করুন।
- দ্বিতীয় ধাপ: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ আবেদনপত্র ফরম পূরণ করে জমা দিন।
- তৃতীয় ধাপ: আবেদন যাচাই করার পর, একটি সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হবে।
- চতুর্থ ধাপ: সাক্ষাৎকার সফল হলে আপনাকে খুব দ্রুতই নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে।
কিছু ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ ও জটিল হতে পারে। এজন্য প্রয়োজনীয় সকল নথিপত্র সঠিকভাবে জমা দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার যদি ফরাসি ভাষার জ্ঞান থাকে, তবে আবেদন প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ হবে। আর অবশ্যই একজন অভিবাসন আইনজীবীর সাহায্য নেবেন।
উপসংহার:
ফ্রান্সে নাগরিকত্ব অর্জন করা খুব একটা সহজ নয়, তবে অসম্ভবও নয়। দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণ করতে ইচ্ছুক ও ধৈর্য্যশীল ব্যক্তিদের জন্য এটি অবশ্যই সম্ভব।
আবেদন করার আগে অবশ্যই আপনার নিকটতম ফরাসি দূতাবাস বা কনস্যুলেটের সাথে যোগাযোগ করুন। ফরাসি নাগরিকত্ব আইন যে কোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে। তাই সর্বশেষ তথ্যের জন্য ফ্রান্সের সরকারি ওয়েবসাইটগুলো দেখতে পারেন।
কিছু দরকারী রিসোর্স:
https://france-visas.gouv.fr/en/visa-application-guidelines
https://bd.ambafrance.org/-Accueil-Anglais-