সৌদি আরবের প্রবাসীদের মধ্যে এমন লোক খুঁজে পাওয়া হয়ত দুষ্কর, যিনি থাইল্যান্ড লটারির নাম শুনেননি। অনেকেই ইতোমধ্যেই থাইল্যান্ড লটারি পেপার কিনেছেন এবং কিছু প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে থাইল্যান্ড লটারি নাম্বারও হাতে পেয়েছেন। আবার অনেকেই প্রতি বছরের মতই এবারও থাইল্যান্ড লটারি সৌদি আরব 2025 ইং বর্ষে অংশগ্রহণের চিন্তা করছেন।
বাংলাদেশি প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বড় একটি অংশ সৌদি আরবে বসবাস করেন। উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, বর্তমানে সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় ২.৬ মিলিয়ন। এই যোদ্ধারা বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাতে সবসময় বিশেষ অবদান রাখেন।
বিগত বছর গুলোতে সৌদি প্রবাসীদের মধ্যে যারা থাইল্যান্ড লটারি পেপার কিনেছেন এবং খুব স্বপ্ন নিয়ে যারা থাইল্যান্ড লটারি রেজাল্ট সৌদি আরবের আনুষ্ঠানিক ড্র দেখতে চেয়েছেন, তাদের জন্য বিশেষ কিছু সতর্কবার্তা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।
থাইল্যান্ড লটারি কি এবং কিভাবে কাজ করে?
থাইল্যান্ড লটারি (Thai Lottery) থাইল্যান্ডের একটি রাষ্ট্র-পরিচালিত একটি লটারি। এটি থাইল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় জুয়া খেলার একটি, যদিও দেশে ক্যাসিনো এবং অন্যান্য অনেক ধরনের জুয়া খেলা অবৈধ। তবে থাই সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত “Government Lottery Office (GLO)” এই লটারি পরিচালনা করে। প্রতি মাসের ১ এবং ১৬ তারিখে এই লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
লটারির টিকিটগুলো আগে থেকেই মুদ্রিত থাকে এবং তা জোড়ায় বিক্রি হয়। প্রতিটি টিকিটে ছয় ডিজিটের একটি নম্বর থাকে। এই লটারিতে বিভিন্ন ধরনের পুরস্কার থাকে, যার মধ্যে প্রথম পুরস্কার ৬ মিলিয়ন baht। এছাড়া দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম পুরস্কারও রয়েছে। কিছু ছোট পুরস্কারও দেওয়া হয়।
যতটুকু জানতে পেরেছি, এটাই হলো থাইল্যান্ড লটারির মূল ফিচার বা পদ্ধতি। সৌদি আরবের অসংখ্য প্রবাসীরা থাইল্যান্ড লটারি পেপার কিনেন এবং পুরস্কারের আশায় নিয়মিত থাইল্যান্ড লটারি লাইভ দেখেন।
থাইল্যান্ড লটারি সৌদি আরব 2025
বিগত বছর গুলোর মতই ২০২৫ সালেও মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ সৌদি আরবেও থাইল্যান্ড লটারি পেপার বিক্রি হবে। এই লটারিটি সাধারণত প্রবাসীদের লক্ষ্য করেই পরিচালনা করা হয়। আর এতেই হাজার হাজার প্রবাসী লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে থাইল্যান্ড লটারি কিনেন।
যদিও সৌদি আরবে থাইল্যান্ড লটারি খেলা বা কেনা সম্পূর্ণরূপে অবৈধ একটি বিষয়। সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জুয়া খেলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। থাইল্যান্ডের লটারি থাইল্যান্ড সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হলেও, সৌদি আরবের অভ্যন্তরে এর কোনো বৈধতা নেই।
তবুও আমাদের প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা এর ভালো-মন্দ বিবেচনা না করেই সৌদি আরবে বসে থাইল্যান্ড লটারি নাম্বার কেনার চেষ্টা করে থাকেন। এটা সৌদি আইনে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। সৌদিতে বসে বৈধভাবে অনলাইনে বা অন্য কোনো মাধ্যমে এই লটারি কেনার বা খেলার সুযোগ নেই।
থাইল্যান্ড লটারি রেজাল্ট সৌদি আরব
সৌদি আরবে থাইল্যান্ড লটারির ফলাফল সরাসরি দেখার কোনো সুস্পষ্ট সরকারি বা বহুল প্রচলিত মাধ্যম নেই। থাইল্যান্ডের লটারি থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয় এবং এর ফলাফল সাধারণত থাইল্যান্ডের সরকারি লটারি অফিসের ওয়েবসাইট (GLO) এবং থাইল্যান্ডের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
সৌদি আরবে লটারি খেলা আইনত নিষিদ্ধ। তাই থাইল্যান্ড লটারির ফলাফল সৌদি আরবের স্থানীয় কোনো চ্যানেলে বা মাধ্যমে পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে, সৌদি আরবে বসবাসকারী থাই নাগরিক বা অন্য কোনো আগ্রহী ব্যক্তি থাইল্যান্ডের GLO-র ওয়েবসাইট বা থাই টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর অনলাইন স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে ফলাফল জানা যায়।
এখন কথা হলো, সৌদি আরবে প্রচারিত থাইল্যান্ড লটারি এটির সৌদি সরকার কর্তৃত কোনো বৈধতা নেই, ঠিক তেমনী ভাবে ইসলামেও এই ধরণের জুয়া ও ক্যাসিনো টাইপের বিষয়াদিতে অংশগ্রহণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শেষ কথা:
একজন বাংলাদেশি হিসেবে আপনি যদি সৌদি আরবের প্রবাসী হয়ে থাকেন, তবে থাইল্যান্ড লটারি সৌদি আরব ২০২৫ অনুষ্ঠিত বিশ্ব জুয়ার আসরে অংশগ্রহণ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকার চেষ্টা করুন। কারণ, থাই লটারি গুলোর মাধ্যমে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশি প্রবাসীদের অনেকেই প্রতারিত হয়েছেন।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় গণমাধ্যম Jamuna TV এই শিরোনামে ’থাই লটারি দিয়ে যেভাবে প্রবাসীদের ফাঁদে ফেলা হয়’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। প্রতিবেদনটিতে থাইল্যান্ড লটারির বিভিন্ন ফাঁদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। সুতরাং, একজন প্রবাসী হিসেবে আপনি থাইল্যান্ড লটারির ফাঁদ থেকে দূরে থাকুন। প্রবাসে ভালো থাকুন এই প্রত্যাশা।
