eProbash

রেমিট্যান্স কাকে বলে? বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাত

রেমিট্যান্স কাকে বলে? বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাত
Written by eProbash

রেমিট্যান্স যে কোনো দেশের জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রেমিট্যান্সের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালি হয় এবং জিডিপিতে এর বিশেষ অবদান রয়েছে। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাত থেকেও দেশ ও দেশের মানুষ বিভিন্নভাবে উপকৃত হয়। কিন্তু রেমিট্যান্স কাকে বলে এবং রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে সরকারের প্রদক্ষেপ কি তা অনেকেই জানে না।

রেমিট্যান্সের উৎস গুলোর মধ্যে রয়েছে শিল্প, রপ্তানি, বিনিয়োগ ইত্যাদি। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাতে প্রবাসী-প্রেরিত অর্থ অন্যতম। তাছাড়া, দেশে বসেই লক্ষ লক্ষ ফ্রিল্যান্সাররা বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করে দেশের রেমিটেন্স খাতকে আরো শক্তিশালি করেছে।

রেমিট্যান্স কাকে বলে?

রেমিট্যান্স বলতে আমরা বেশিরভাগ মানুষই প্রবাসী-প্রেরিত অর্থকেই বুঝি। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী-প্রেরিত অর্থ হলো প্রবাসে কর্মরত ব্যক্তিরা তাদের পরিবার ও প্রিয়জনদের কাছে পাঠানো অর্থ, যা তারা বিদেশে বসে উপার্জন করে।

রেমিট্যান্সের আরো একটি উল্লেখযোগ্য উৎস হলো বাংলাদেশের পোশাক শিল্প, বাংলাদেশের পোশাকগুলো বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়, এর মাধ্যমেও দেশে বৈদেশিক মুদ্রা রেমিটেন্স হিসেবে আসে।

প্রযুক্তি খাতেও লক্ষ লক্ষ ফ্রিল্যান্সার অনলাইনে বিভিন্ন প্লাটফর্মে নিজেদের স্কিলের মাধ্যমে উপার্জন করছে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। এই উপার্জিত অর্থও দেশেও রেমিট্যান্স খাতকে করেছে আরো শক্তিশালী।

এভাবেই প্রতিনিয়তই বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি হচ্ছে।  এতে অর্থনৈতিক ভাবে দেশ ও দেশের মানুষ উপকৃত হচ্ছে।

বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাত

বাংলাদেশের রেমিটেন্স খাতে প্রবাসী আয় ছাড়াও আরো বিভিন্ন উপায়ে রেমিটেন্স আসে। তবে প্রবাসী-প্রেরিত অর্থ রেমিটেন্স খাতে অসাধারণ ভূমিকা রাখার ফলে রেমিটেন্স বলতে প্রবাসী প্রেরিত অর্থই সবার আগে চলে আসে।

২০২১ – ২০২২ অর্থবছরে প্রবাসীদের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার। ২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী প্রবাসীদের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ম এবং বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণকারী শীর্ষ দেশ হিসেবে সৌদি আরবের অবস্থান ছিল প্রথম।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশী প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। ২০২২ সালে রেমিট্যান্স পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮ম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-মার্চ) প্রবাসীদের থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৮৬৬ কোটি ৬৮ লাখ মার্কিন ডলার।

রেমিট্যান্সের প্রভাব

রেমিট্যান্স দেশের মোট আয়ের (জিডিপি এর) একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বিভিন্ন ভাবে উৎসাহিত করে। রেমিট্যান্স পরিবারের আয় বৃদ্ধি করে, দারিদ্র্য কমাতে সাহায্য করে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করে।

রেমিট্যান্স ব্যবহার করে অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেন, সম্পত্তি ক্রয় করেন এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করেন। রেমিট্যান্স বিদেশী মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধি করে, যা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম রেমিট্যান্স প্রাপ্তকারী দেশ। সরকার রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি এবং প্রবাসীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে সরকারের পদক্ষেপ

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো অর্থ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি করে, দারিদ্র্য বিমোচন করে এবং দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করে।

রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিম্নরূপ: –

১. প্রণোদনা প্রদান: রেমিট্যান্স পাঠানোকে উৎসাহিত করার জন্য সরকার বিভিন্ন ধরণের রেমিট্যান্স প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। বর্তমানে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য 2.5% রেমিট্যান্স বোনাস দেওয়া হচ্ছে।

২. খরচ কমানো: রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কমানোর জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেল এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে এই সুবিধাটি পাবেন।

৩. হুন্ডি ব্যবস্থা বন্ধ: হুন্ডি ব্যবস্থার মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানো অবৈধ এবং এটি দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। হুন্ডি ব্যবস্থা বন্ধ করার জন্য সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

৪. বৈধ চ্যানেল ব্যবহারে উৎসাহিত করা: সরকার প্রবাসীদের বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য উৎসাহিত করছে। বৈধ চ্যানেল ব্যবহারের মাধ্যমে প্রবাসীরা তাদের অর্থের উপর বেশি নিয়ন্ত্রণ পায় এবং সুবিধাও বেশি পায়।

৫. দক্ষ জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধি: দক্ষ জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধি রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। দক্ষ জনশক্তি বিদেশে বেশি আয় করতে পারে এবং তারা বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে পারে।

৬. প্রবাসীদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি: সরকার প্রবাসীদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রবাসীদের জন্য ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং প্রবাসীদের জন্য নিয়মিত মিটিং ও কর্মশালা আয়োজন।

৭. অবকাঠামো উন্নয়ন: সরকার দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। অবকাঠামো উন্নয়ন হলে প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবে এবং তারা বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবে।

এই পদক্ষেপগুলো ছাড়াও সরকার রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য আরও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। উল্লেখ্য যে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য সরকারের পাশাপাশি ব্যাংক, মোবাইল অপারেটর এবং প্রবাসীদেরও ভূমিকা রয়েছে।

রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রবাসীদের অর্থনৈতিক অবদান দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি এবং প্রবাসীদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টির জন্য সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে একসাথে কাজ করতে হবে।

FAQ

রেমিট্যান্স অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান কত?

পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রবাসীদের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান ২০২১ সালে সপ্তম এবং ২০২২ সালে ৮ম।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে কোন দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে?

২০২২-২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্স সবচেয়ে বেশি আসে সৌদি আরবের প্রবাসীদের মাধ্যমে। তাই বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণকারী শীর্ষ দেশ হিসেবে সৌদি আরবের অবস্থান প্রথম।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে কোন দেশ থেকে?

সাধারণত সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স সবচেয়ে বেশি আসে। তবে কিছু কিছু সময় যুক্তরাস্ট্র ও আরব আমিরাত এগিয়ে যায়।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে কোন জেলায়?

প্রবাসী আয়ে প্রথম অবস্থানে ঢাকা বিভাগ। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ।

About the author

eProbash

প্রবাসীদের প্রতি অকৃত্রিম হৃদয়ের টান, তাদের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রেখে তাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরে গর্ববোধ করি।

Leave a Comment