eProbash

ইউরোপের কোন দেশে নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ

ইউরোপের কোন দেশে নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ
Written by eProbash

ইউরোপের কোন দেশে নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ তা জানার কৌতুহলী কম-বেশি সকলেই। ইউরোপের নাগরিকত্ব পাওয়া অনেকের স্বপ্নও বটে। কারণ, ইউরোপের শেনজেন ভুক্ত যে কোনো একটি দেশের ভিসা পেয়ে গেলেই ২৭টি দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমণ করা যায়।

বিভিন্ন সুযোগ -সুবিধার কারণে অধিকাংশ মানুষ বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপের দেশগুলোকে বেশি প্রাধান্য দেয়। যদিও এই দেশগুলোতে নাগরিকত্ব পাওয়া অনেকটা জটিল ব্যাপার। তবুও কিছু কিছু দেশ রয়েছে, যেগুলোতে তুলনামূলক ভাবে সহজেই নাগরিকত্ব পাওয়া যায়।

শক্তিশালী পাসপোর্ট, জীবনযাত্রার মান, ভ্রমণের সুযোগ, উন্নত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা  – এই সবকিছুর জন্যই ইউরোপ হলো আকর্ষণের জায়গা। কিন্তু ইউরোপের প্রতিটি দেশের নাগরিকত্ব নীতিমালা ভিন্ন, তাই একচেটিয়া ভাবে বলা যাবে না যে অমুক দেশের নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ।

ইউরোপের কোন দেশে নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ

ইউরোপের সেনজেন ভুক্ত এবং নন সেনজেন ভুক্ত প্রায় প্রতিটি দেশেই নতুন নাগরিকত্ব নেওয়ার অপশন আছে। তবে সহজ ও কঠিনের ব্যাপার রয়েছে এখানে। যেই দেশ গুলো তুলনামূলক ভাবে সহজেই নাগরিকত্ব প্রদান করে, এমন ৫ টি দেশের নাম উল্লেখ করা হলো। –

১) আয়ারল্যান্ডে নাগরিকত্ব

আয়ারল্যান্ড (Ireland) পশ্চিম ইউরোপের একটি দেশ। আয়ারল্যান্ড দুটি অংশে বিভক্ত: উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের প্রজাতন্ত্র। আয়ারল্যান্ডের প্রজাতন্ত্রকে সাধারণত আয়ারল্যান্ড বলা হয়, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য।

আয়ারল্যান্ডের রাজধানীর নাম ডাবলিন। দেশটির আয়তন প্রায় ৭০,২৭৩ বর্গ কি.মি. এবং জনসংখ্যা প্রায় ৫ মিলিয়ন। দেশটির সরকারের ধরণ পার্লামেন্টারি প্রজাতন্ত্র, ভাষা: আয়ারিশ (গায়েলিক) এবং ইংরেজি, মুদ্রা: ইউরো (EUR) এবং প্রধান ধর্ম: ক্যাথলিক খ্রিস্টান।

আয়ারল্যান্ডের নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় গুলোর মধ্যে রয়েছে: জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব (Citizenship by Birth), বংশগত ভাবে নাগরিকত্ব (Citizenship by Descent), বৈবাহিক সূত্রে নাগরিকত্ব (Citizenship by Marriage), প্রাকৃতিকীকরণের (Naturalization) মাধ্যমে নাগরিকত্ব ইত্যাদি। আপনি এই পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে আয়ারল্যান্ডের নাগরিকত্ব অর্জন করতে পারবেন।

২) পর্তুগালে নাগরিকত্ব

পর্তুগাল (Portugal) দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের একটি দেশ, যা ইবেরিয়ান উপদ্বীপে অবস্থিত। দেশটির উত্তর এবং পূর্ব দিকে স্পেন এবং পশ্চিম এবং দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগর।

দেশটির রাজধানী নাম: লিসবন (Lisbon), আয়তন: প্রায় ৯২,২১২ বর্গ কি.মি. এবং জনসংখ্যা: প্রায় ১০ মিলিয়ন। দেশটির সরকারের ধরণ: ইউনিটারি পার্লামেন্টারি রিপাবলিক, জাতীয় ভাষা: পর্তুগিজ (Portuguese), মুদ্রা: ইউরো (EUR) এবং
প্রধান ধর্ম: রোমান ক্যাথলিক।

পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া বিভিন্ন উপায়ে হতে পারে। সাধারণত পর্তুগালের নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রধান উপায়গুলো হলো জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব, বিবাহসূত্রে নাগরিকত্ব, এবং সাধারণীকরণের (naturalization) মাধ্যমে নাগরিকত্ব।

৩) জার্মানিতে নাগরিকত্ব

জার্মানি (Germany) মধ্য ইউরোপের একটি প্রভাবশালী দেশ, যা তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, উন্নত অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং বিশ্বের অন্যতম প্রধান শিল্প ও প্রযুক্তি কেন্দ্র।

জার্মানির রাজধানী: বার্লিন (Berlin), আয়তন: প্রায় ৩৫৭,৩৮৬ বর্গ কি.মি. এবং জনসংখ্যা: প্রায় ৮৩ মিলিয়ন। দেশটির সরকারের ধরণ: ফেডারেল পার্লামেন্টারি রিপাবলিক, ভাষা: জার্মান (German), মুদ্রা: ইউরো (EUR) এবং প্রধান ধর্ম: খ্রিস্টান (প্রধানত প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ক্যাথলিক)।

জার্মানিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া প্রধানত, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব, বিবাহসূত্রে নাগরিকত্ব, এবং সাধারণীকরণের (naturalization) মাধ্যমে নাগরিকত্ব।

৪) ইতালিতে নাগরিকত্ব

ইতালি (Italy) দক্ষিণ ইউরোপের একটি প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির দেশ। দেশটি আধুনিক হিসেবে পরিচিত হলেও এর ইতিহাস এবং ঐতিহ্য অনেক পুরনো। ইতালি তার শিল্প, স্থাপত্য, সঙ্গীত, খাদ্য, এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।

ইতালির রাজধানী: রোম (Rome), আয়তন: প্রায় ৩০১,৩৪০ বর্গ কি.মি. এবং জনসংখ্যা: প্রায় ৬০ মিলিয়ন। দেশটির সরকারের ধরন: পার্লামেন্টারি রিপাবলিক, ভাষা: ইতালিয়ান (Italian), মুদ্রা: ইউরো (EUR) এবং প্রধান ধর্ম: রোমান ক্যাথলিক।

ইতালিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রতিটি প্রক্রিয়া বিভিন্ন আইনি শর্ত এবং প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে। সঠিক এবং আপডেট তথ্যের জন্য ইতালির অভিবাসন বা নাগরিকত্ব সম্পর্কিত অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করা উচিত।

৫) স্পেনে নাগরিকত্ব

স্পেন (Spain) দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক দেশ। এটি ইবেরিয়ান উপদ্বীপে অবস্থিত এবং পশ্চিমে পর্তুগাল, উত্তরে ফ্রান্স এবং আন্দোরার সীমানা দ্বারা বেষ্টিত। স্পেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য এবং এর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, ভাষা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।

স্পেনের আয়তন: প্রায় ৫০৫,৯৯০ বর্গ কি.মি. এবং জনসংখ্যা: প্রায় ৪৭ মিলিয়ন। দেশটির রাজধানীর নাম: মাদ্রিদ (Madrid), সরকারের ধরণ: সংসদীয় রাজতন্ত্র (Parliamentary Constitutional Monarchy), মুদ্রা: ইউরো (EUR) এবং ভাষা: স্পেনীয় (Spanish), এছাড়াও কাতালান, বাস্ক এবং গালিশিয়ান ভাষার প্রচলন রয়েছে।

স্পেনে নাগরিকত্ব পাওয়া যায় প্রধানত,  জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব, বিবাহসূত্রে নাগরিকত্ব এবং সাধারণীকরণের (naturalization) মাধ্যমে।

ইউরোপ কান্ট্রিতে নাগরিকত্ব

ইউরোপ কান্ট্রির দেশগুলোতে নাগরিকত্ব পাওয়া খুব একটা সহজ ব্যাপার নয়। তবে উল্লেখিত দেশগুলোতে তুলনামূলক ভাবে নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ। পৃথিবীর যে কোনো দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রসেসিংটা প্রায় একই ধরণের হয়। খুব বেশি একটা পার্থক্য হয় না।

উপারোক্ত ৫টি দেশের মধ্যে সেনজেন দেশের তালিকায় রয়েছে স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি ও ইতালি।  আর আয়ারল্যান্ড হলো ইউরোপেরই একটি দেশ, তবে এটি নন সেনজেন ভুক্ত দেশ।

ইউরোপের দেশগুলোকে নাগরিকত্বের জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হয়। আর্থিক ভাবে সচ্চল হতে হয়। কাঙ্খিত দেশের ভাষা পারদর্শী, ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়েও জ্ঞানার্জন জরুরি।  আরো বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করে তারপর নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব।

শেষ কথা

ইউরোপের কোন দেশে নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ তার একটি সাধারণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশাকরি ইউরোপ ভ্রমণে এই ব্লগের তথ্যগুলো আপনার সহায়ক হবে।

উল্লেখ্য, এখানে কেবলমাত্র ৫টি দেশের তথ্য দেওয়া হয়েছে। ইউরোপে আরও অনেক দেশ আছে যেখানে নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব। আপনার জন্য কোন দেশটি সবচেয়ে ভালো হবে তা নির্ভর করবে আপনার ব্যক্তিগত পরিস্থিতি, দক্ষতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার উপর।

প্রতিটি দেশের নিজস্ব নাগরিক নীতিমালা আছে। বিস্তারিত জানার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস বা সরকারি ওয়েবসাইট দেখুন। ধৈর্য ধরুন এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র সঠিকভাবে জমা দিন। আপনার আবেদন প্রক্রিয়াটি সহজ করতে এবং ভুল এড়াতে একজন অভিবাসন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করুন। শুভকামনা!

About the author

eProbash

প্রবাসীদের প্রতি অকৃত্রিম হৃদয়ের টান, তাদের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রেখে তাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরে গর্ববোধ করি।

Leave a Comment